এনিমেশন শব্দের অর্থ হল- ‘সোল’ বা আত্মা। এনিমেশন কি? এনিমেশন কত প্রকার ও কি কি? এনিমেশন এর প্রকারের বর্ণনা এবং এনিমেশন তৈরি কিভাবে শিখবেন তা জানবেন।
What is Animation? And its classification.
এনিমেশন অর্থ কি?
এনিমেশন শব্দটি লাতিন শব্দ ‘এনিমা’ থেকে এসেছে। এনিমেশন শব্দের অর্থ হল- ‘সোল’ বা আত্মা। পর্দায় কোন একটি জড় বস্তু বা চরিত্রকে চলমান কোন চিত্রে জীবন বা রূপদান দেওয়াকে এনিমেশন বলা হয়। আর এই জীবন দানের কাজটি যারা করে থাকে তাদের এনিমেটর বলা হয়। এনিমেশন শিল্পের উদ্ভাবক ওয়াল্ট ডিজনি’র হাত ধরেই এনিমেশন আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছিয়েছে। তার হাতে তৈরি বিখ্যাত ‘মিকি মাউস’, ‘পিনোকি’ ‘ডোনাল্ড ডাক’ এর মত এনিমেটেড কার্টুন ফিল্ম দিয়েই এনিমেশন কার্টুন ফিল্মের শুরু। তিনি ১৯২৯ সালে 'মিকি মাউস' কার্টুন চরিত্রের সৃষ্টি করেন। তার দীর্ঘ সাধনাই মিকি মাউসকে জীবন্ত চরিত্র দান করে নির্মাণ করেন কার্টুন চলচ্চিত্র। আর এভাবেই মূলত এনিমেশন এর যাত্রা শুরু হয়।
এনিমেশন কি ধরনের কন্টেন্ট?
এনিমেশন একটি মিডিয়া কনটেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:
- বিনোদন: এনিমেশন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, ভিডিও গেমস, এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক সামগ্রীতে পাওয়া যায়।
- শিক্ষা: এনিমেশন শিক্ষামূলক উপকরণ, যেমন: বই, ভিডিও, এবং অ্যাপস, তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রচারণা: এনিমেশন বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ডিং, এবং অন্যান্য প্রচারমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শিল্প: এনিমেশন একটি আর্টফর্ম যা চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, এবং অন্যান্য মিডিয়াতে পাওয়া যায়।
এনিমেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার হলো বিনোদন। এনিমেশন চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি জনপ্রিয় বিনোদনমূলক মাধ্যম। এনিমেশন ভিডিও গেমসগুলিকে আরও আকর্ষক এবং বাস্তববাদী করে তুলতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এনিমেশন শিক্ষার একটি কার্যকর উপায়ও হতে পারে। এনিমেশনের মাধ্যমে জটিল ধারণাগুলোকে সহজে বোঝানো যায়। এনিমেশন শিক্ষামূলক ভিডিও, অ্যানিমেটেড বই, এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক সামগ্রী তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এনিমেশন কত প্রকার ও কি কি?
এনিমেশন বেশ কয়েক ধরণের আছে। এইখান থেকে কিছু পপুলার এনিমেশন এর নাম দেওয়া হলো:
- টু-ডি সেল এনিমেশন
- থ্রি-ডি সিজিআই এনিমেশন (CGI)
- থ্রি-ডি মোশন ক্যাপচার এনিমেশন
- ভিজুয়াল এফেক্টস
- ক্লে এনিমেশন
চলুন এইবার এনিমেশন এর প্রকারের বর্ণনা জেনে নেই।
টু-ডি সেল এনিমেশন :
সবচেয়ে পুরনো ধরনের পদ্ধতির এনিমেশন এটি। যে বস্তু বা চরিত্রের এনিমেশন করা হবে তার সকল প্রকার ধাপের পরপর অনেকগুলো ছবি আঁকা শেষ করে তাকে সেলুলয়েডের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত রূপ দেওয়া হয়।‘মিকিমাউস’ এই পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে পরিচালিত হত
থ্রি-ডি সিজিআই এনিমেশন :
এটি সফটওয়্যার নির্ভর এনিমশেন পদ্ধতি।এতে প্রথমে বিভিন্ন রকমের বাঁকানো রেখার সাহায্যে প্রথমে কোন একটি ছবির কিছু অংশ (কম্পিউটার জেনারেটর ইমেজারি) দিয়ে আঁকতে হবে। এরপর ছবিটিকে ওই সফটওয়্যারের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক এনিমেশন রূপ দেওয়া হয়। বিখ্যাত পিক্সার স্টুডিও’র ‘আপ’ ও ‘টয় স্টোরি’ -এর মতো হলিউডের বিখ্যাত এনিমেশন ফিল্মলগুলো এই পদ্ধতিতেই তৈরি করা হয়েছে। এই ধরণের এনিমেশনে কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃশ্য তৈরি করা হয়। CGI এনিমেশনে বাস্তব জগতের বস্তু বা দৃশ্যকে ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার সম্পূর্ণ কাল্পনিক দৃশ্যও তৈরি করা যেতে পারে।
থ্রি-ডি মোশন ক্যাপচার এনিমেশন:
অনেক সময় ত্রিমাত্রিক বস্তু বা চরিত্র তৈরি করে তাকে এনিমেট করতে এই পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়। কোন একজন ব্যক্তির গায়ে একটি সেন্সর লাগিয়ে তার নড়াচড়াকে কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ত্রিমাত্রিক বস্তু বা চরিত্রের নড়াচড়ার কাজে লাগানো হয়। জনপ্রিয় ছবি ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ সিরিজে ‘গোলাম’ চরিত্রটিকে এই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছিল ও তাকে এভাবেই পরিচালিত করা হয়েছিল। হলিউডের জনপ্রিয় ছবি ‘আভাটার’ তেও থ্রিডি এনিমেশন ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে থ্রিডি এনিমেশন এর চমৎকার ব্যবহার করা হয়েছে। যা তার নজরকাড়া এনিমেশের জন্যে বিখ্যাত হয়ে রবে। এছাড়া বিশ্বখ্যাত কমিক বুকের প্রধান চরিত্র টিনটিনকে খুব শিগগিরই থ্রিডি পর্যায়ে দেখা যাবে বড়পর্দায়। ওয়েটা নামের একটি স্টুডিওতে খ্যাতিমান পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ টিনটিনকে নিয়ে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস্ অব টিনটিন’ নামে থ্রি ডাইমেনশন ফিল্ম তৈরি করছেন। ছবিটিতে থাকছে সর্বাধুনিক ডিজিটাল ক্যারেক্টার অ্যানিমেশনের প্রয়োগ।
ভিজুয়াল এফেক্টস :
অ্যানিমেশন এবং মাল্টিমিডিয়া স্পেশালিস্টরা আজকাল ভিজুয়াল এফেক্টসকেও তাদের কাজে ব্যবহার করছেন। সাধারণত স্বল্পদৈর্ঘ্যের কোনো অ্যানিমেশন বা স্পেশাল এফেক্টস তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। বলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র রা’ওয়ান এবং হ্যারি পটার সিরিজের চলচ্চিত্রের বেশ অনেকগুলো স্পেশাল এফেক্ট এই পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে । এই স্পেশাল এফেক্টের কারনেই ছবিগুলো আমাদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যাতে বিভিন্ন এফেক্টগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে।
ক্লে এনিমেশন :
ক্লে এনিমেশন এমন একটি পদ্ধতি যাতে সিন্থেটিক ক্লে-র সাহায্যে চরিত্র তৈরি করে তার নড়াচড়ার পরপর অনেকগুলো ছবি তোলা হয় । এতে অনেক সময় এক সেকেন্ডের একটি নড়াচড়ার জন্যে বিশ থেকে পঁচিশটি ফ্রেমে ছবি নিতে হয়। আর এই ছবিগুলোকেই পরপর সাজিনোর পর হয়ে উঠে এক একটি ক্লে এনিমেশন। যেমন বলিউডের জনপ্রিয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘তারে জমিন পার’তে এই ক্লে পদ্ধতির এনিমেশন ব্যবহার করা হয়েছে।
এনিমেশন শেখার উপায়:
এনিমেশন শেখার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি অনলাইন কোর্স, বই, এবং অন্যান্য রিসোর্স থেকে এনিমেশন শিখতে পারেন। এছাড়াও, আপনি একটি এনিমেশন স্কুল বা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েও এনিমেশন শিখতে পারেন।
অনলাইন কোর্স হল এনিমেশন শেখার একটি জনপ্রিয় উপায়। অনলাইনে অনেকগুলি বিনামূল্যের এবং পেইড কোর্স পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় অনলাইন কোর্স হল:
- YouTube
- Udemy
- Coursera
- edX
- Skillshare
এনিমেশন শেখার জন্য কিছু টিপস
এনিমেশন শেখার জন্য এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল:
- নিয়মিত অনুশীলন করুন: এনিমেশন একটি দক্ষতা, তাই নিয়মিত অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ।
- অন্যান্য এনিমেটরদের কাজ দেখুন: অন্যান্য এনিমেটরদের কাজ দেখে আপনি শিখতে পারেন।
- এনিমেশন গ্রুপে সাথে যুক্ত হন: এনিমেশন গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে আপনি অন্য এনিমেটরদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং তাদের কাছ থেকে শিখতে পারবেন।
এনিমেশন একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু ফলপ্রসূ শিল্প। ধৈর্যশীল এবং পরিশ্রমী হলে আপনি এনিমেশন শিখতে পারবেন এবং একজন দক্ষ এনিমেটর হয়ে উঠতে পারবেন। আশা করি এর মাধ্যমে আপনারা এনিমেশন কি? এনিমেশন কত প্রকার ও কি কি? এনিমেশন এর প্রকারের বর্ণনা এবং এনিমেশন তৈরি কিভাবে শিখবেন তার জন্য একটি ভালো আইডিয়া পেয়েছেন।
রেফারেন্স - নাজমুল হাসান মজুমদার
কপিরাইট - Peak Fiction