হ্যালোইন একটি খ্রিস্টান ধর্মীয় উৎসব যা প্রতি বছর অক্টোবর ৩১ তারিখে পালিত হয়। বাংলায় হ্যালোইনকে "ভূতদের উৎসব" বা "মৃতদের উৎসব" বলা যায়। Peak Ficti
History behind Halloween.
হ্যালোইন কি?
হ্যালোইন একটি খ্রিস্টান ধর্মীয় উৎসব যা প্রতি বছর অক্টোবর ৩১ তারিখে পালিত হয়। এটি মূলত একটি প্রাচীন সেল্টিক উৎসব যা মৃত্যু, ভূত এবং জাদুবিদ্যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের পর, এই উৎসবটি খ্রিস্টান ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে মিশে যায় এবং বর্তমানে এটি একটি সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে পরিচিত।
হ্যালোইন শব্দের অর্থ কী?
হ্যালোইন বা "হ্যালোউইন" শব্দটির উৎপত্তি ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মূলত খ্রিস্টীয় ধর্ম থেকে হয়েছে। "হ্যালোইন" শব্দের অর্থ "শোধিত সন্ধ্যা" বা "পবিত্র সন্ধ্যা"। এই শব্দটি স্কটিশ ভাষার শব্দ "অল হ্যালোজ' ইভ" থেকে এসেছ। স্কটে ব্যবহৃত "ইভ" শব্দটি সংকুচিত বা সংক্ষিপ্ত হয়ে "ইন" হয়ে যায়। এভাবে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়ে "হ্যালোজ' ইভ" শব্দটি "হ্যালোইন"-এ রূপান্তরিত হয়। যদিও "অল হ্যালোজ" শব্দটি প্রাচীন ইংরেজিতে পাওয়া যায়, তবে শব্দটি ১৫৫৬ সালের পরে আর ব্যবহৃত হয়নি।
হ্যালোইন বাংলা অর্থ: বাংলায়, "All Hallows' Eve" শব্দটিকে "সব পবিত্রদের দিনের আগের দিন" হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে। তবে, এই অনুবাদটি খুবই আক্ষরিক। হ্যালোইন শুধুমাত্র "সব পবিত্রদের দিনের আগের দিন" নয়, এটি একটি উৎসবও। তাই, বাংলায় হ্যালোইনকে "ভূতদের উৎসব" বা "মৃতদের উৎসব" হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে।
হ্যালোইন এর ইতিহাস
হ্যালোইন একটি বার্ষিক উৎসব যা প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর পালিত হয়। এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হল মৃত আত্মাদের স্মরণে আসা। হ্যালোইন উৎসবের ইতিহাস প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো।
প্রাচীন কেল্ট ধর্মে, বছরকে দুই ভাগে ভাগ করা হত: গ্রীষ্ম এবং শীত। ৩১ অক্টোবর ছিল গ্রীষ্মের শেষ দিন এবং শীতের শুরু। কেল্টরা বিশ্বাস করত যে এই দিনটিতে মৃতদের আত্মারা জীবিতদের জগতে ফিরে আসে। এই আত্মাগুলি ভালো বা খারাপ হতে পারে, তাই মানুষ তাদের থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং রীতিনীতি পালন করত। কেল্টরা বিশ্বাস করত যে মৃতদের আত্মারা তাদের প্রিয়জনদের সাথে দেখা করতে আসে। তাই তারা এই দিনটিতে তাদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করত এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাত। তারা ভয়ঙ্কর মুখোশ পরে, আগুন জ্বালিয়ে এবং শব্দ করে এই আত্মাদের ভয় দেখাতে চেষ্টা করত।
খ্রিস্টীয় ধর্মের আগমনের পর, হ্যালোইন উৎসবের সাথে খ্রিস্টীয় রীতিনীতি মিশে যায়। পোপ গ্রেগরি IV ১ নভেম্বরকে "অল সেইন্টস ডে" ঘোষণা করেন। এই দিনটিতে খ্রিস্টানরা তাদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করে এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
কেন হ্যালোইন উদযাপন করা হয়
ক্যান্ডি সংগ্রহ করা |
হ্যালোইন উদযাপনের মূল কারণ হল মৃত আত্মাদের স্মরণে আসা। প্রাচীন কেল্ট ধর্মে, বছরের এই সময়টিকে মৃতদের আত্মাদের জন্য একটি দরজা খোলা সময় হিসাবে বিবেচনা করা হত। এই আত্মাগুলি ভালো বা খারাপ হতে পারে, তাই মানুষ তাদের থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং রীতিনীতি পালন করত।
হ্যালোইন উদযাপনের কিছু নির্দিষ্ট কারণ হল:
- মৃতদের স্মরণে আসা: হ্যালোইন একটি দিন যা মৃত আত্মাদের স্মরণে আসা হয়। এই দিনটিতে মানুষ তাদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করে এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
- অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়া: প্রাচীন কেল্টরা বিশ্বাস করত যে বছরের এই সময়টিতে অশুভ শক্তি বেশি সক্রিয় থাকে। তাই তারা বিভিন্ন রীতিনীতি পালন করে এই শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করত।
- মজা করা: হ্যালোইন একটি উৎসব, তাই মানুষ এই দিনটিতে আনন্দ করে এবং মজা করে। তারা ভয়ঙ্কর পোশাক পরে, ক্যান্ডি সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
বর্তমানে, হ্যালোইন একটি বাণিজ্যিক উৎসব হিসাবেও পরিচিত। এই দিনটিতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান এবং কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়, যেমন পার্টি, কনসার্ট এবং ফ্যাশন শো।
ভৌতিক কস্টিউম পড়া |
হ্যালোইন উদযাপনের কিছু ঐতিহ্যগত রীতিনীতি হল:
- ক্যান্ডি সংগ্রহ: শিশুরা হ্যালোইন রাতে "Trick or treat" বলে ঘুরে ঘুরে ক্যান্ডি সংগ্রহ করে।
- ভয়ঙ্কর কস্টিউম পোশাক পরা: মানুষ ভয়ঙ্কর পোশাক পরে এই দিনটিতে আনন্দ করে।
- জাদুকরী অনুষ্ঠান: হ্যালোইন রাতে বিভিন্ন জাদুকরী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
- আগুন জ্বালানো: কিছু জায়গায় হ্যালোইন রাতে আগুন জ্বালানো হয়।
হ্যালোইন একটি জনপ্রিয় উৎসব যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়। এই উৎসবটি বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণ, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
সৌদি আরবে হ্যালোইন উৎসব
সৌদি আরব একটি মুসলিম দেশ, যেখানে ইসলাম ধর্ম রাষ্ট্রীয় ধর্ম। ইসলাম ধর্মে, হ্যালোইন একটি অ-ইসলামিক উৎসব হিসাবে বিবেচিত হয়। হ্যালোইন উদযাপনকে ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়।
তবে, সৌদি আরবে হ্যালোইন উদযাপনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রথমবারের মতো একটি সরকারিভাবে অনুমোদিত হ্যালোইন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান এবং কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়েছিল, যেমন পোশাক প্রতিযোগিতা, ক্যান্ডি সংগ্রহ এবং জাদুকরী অনুষ্ঠান।
সৌদি আরবে হ্যালোইন উদযাপনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে কিছু মুসলিম ধর্মীয় নেতা সমালোচনা করেছেন। তারা এই উৎসবকে ইসলাম ধর্মের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন। সৌদি আরবে হ্যালোইন উদযাপনের ভবিষ্যত কি হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তবে, এই উৎসবের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একটি লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কপিরাইট - Peak Fiction