ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বলতে কি বুঝায়। Peak Fiction
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হল একটি আইন যা ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করে। এই আইনটি ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত হয়। বাংলাদেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-ডিএসএ পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন আনার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই নতুন আইনটির নামকরণ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩। নতুন আইনে মোট ধারা ৬০টি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বলতে বোঝায় ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের জন্য প্রণীত আইন। এই আইনটি ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করে এবং সেগুলোর জন্য শাস্তির বিধান করে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা সমূহ:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট ৬০টি ধারা রয়েছে। এই ধারাসমূহ ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করে এবং সেগুলোর জন্য শাস্তির বিধান করে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা যাবে যদি কেউ এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের সংজ্ঞায় পড়ে এমন কাজ করে। এই আইনে মামলা করতে হলে প্রথমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার জন্য নির্দিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অভিযোগ দায়ের করার পর থানায় একটি মামলা রুজু করা হবে। মামলা রুজু হওয়ার পর তদন্ত করে পুলিশ মামলার চার্জশিট দাখিল করবে। চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর আদালত মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
অপরাধ ও দণ্ড :
- ১৭ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোয় বেআইনি প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন,বিনষ্ট বা অকার্যকরের চেষ্টা করে, তাহলে অনধিক সাত বছরের জেল; জরিমানা ২৫ লাখ টাকা। ক্ষতিসাধন করলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের কারাদন্ড। জরিমানা এক কোটি টাকা।
- ১৮ ধারা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশ বা সহায়তা করলে সর্ব্বোচ তিন বছরের কারাদণ্ড। জরিমানা ১০ লাখ টাকা।
- ১৯ ধারা মতে, বেআইনিভাবে যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম হতে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত ভাণ্ডার, তথ্য বা উদ্বৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি সংগ্রহ করেন, তাহলে সর্ব্বোচ সাত বছরের কারাদণ্ড; জরিমানা ১০ লাখ টাকা।
- ২০ ধারা অনুযায়ী, কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন, ধ্বংস করলে সর্ব্বোচ তিন বছরের সাজা। জরিমানা তিন লাখ টাকা।
- ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা ও মদদ দিলে সর্ব্বোচ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড; জরিমানা ৫০ লাখ টাকা।
- ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা,নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে এবং জনগণের মাঝে ভয়ভীতি সঞ্চারের জন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা করায়, তাহলে সর্ব্বোচ সাজা ১৪ বছর কারাদণ্ড। জরিমানা এক কোটি টাকা।
- ২৮ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করে, তাহলে সর্ব্বোচ ১০ বছরের সাজা। জরিমানা ২০ লাখ টাকা।
- ২৯ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের ৪৯৯ ভঙ্গ করে কোনো অপরাধ করেন তাহলে সর্ব্বোচ তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। জরিমানা পাঁচ লাখ টাকা।
- ৩০ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক, বীমা বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইন বহির্ভূতভাবে ট্রানজেকশন করলে সর্ব্বোচ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
- ৩২ ধারা মতে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন, তাহলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের সাজা। ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।
- ৩৪ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যাকিং করেন তাহলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের সাজা। জরিমানা এক কোটি টাকা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেন প্রয়োজন?
ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সাথে সাথে ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে জালিয়াতি, প্রতারণা, তথ্য চুরি, হ্যাকিং, ধর্ষণ, মানহানি, ইত্যাদি। এই অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামিন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য জামিনের বিধান রয়েছে। তবে, কিছু অপরাধের জন্য জামিনের সুযোগ নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইন ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। তবে, এই আইনের অপব্যবহার রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পোস্টে ভুল ক্রটি থাকতে পারে। রেফারেন্স - যুগান্তর