এনিমে কি? এনিমে কিভাবে তৈরি শুরু হয়? এনিমে সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে জানুন এই পোস্টে। Origin of Anime. History of Anime. How anime was first made?

এনিমের ইতিহাস - প্রথম পর্ব

এনিমে সৃষ্টির ইতিহাস - প্রথম পর্ব | Origin of Anime | Peak Fiction

ঝকঝকে তকতকে, নজরকাড়া জাপানি এনিমেশন তথা এনিমের পেছনে ইতিহাসটা দীর্ঘ আর বিস্ময়কর। হাতে আকাঁ ছবির এনিমেশন চলচ্চিত্রের আদিভুমি জাপান, এমনটা বললে ভুল হবে না। চলচ্চিত্র তখনো শুরু হয়নি, ঊনবিংশ শতকে জাপানের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল, উৎসুশি-এ। কি ছিল এই উৎসুশি-এ?

১৭৬০ শতকে জাপানি একজন বিজ্ঞানী পাশ্চাত্যের প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর একটা বই লেখেন, ঐ বইয়ে "ম্যাজিক ল্যান্টার্ন" এর কথা উল্লেখ করা হয়। নেদারল্যান্ডে তৈরি ম্যাজিক ল্যান্টার্নকে বলা যায়, প্রজেক্টরের পূর্বসূরী, যাতে কাঁচের স্লাইডে ছবি আঁকিয়ে আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে কাগজের বা কাপড়ের পর্দায় প্রদর্শন করা হত। ইউরোপে ম্যাজিক ল্যান্টার্নের সাহায্যে phantasmagoria প্রদর্শন করা হতো, যেটা একধরণের স্লাইডশো ছিল। 

কামেয়া তোরাকু, একজন প্রতিভাবান কিমোনো শিল্পী ছিলেন, কিমোনোর উপর ছবি আঁকা ছিল তার পেশা। ছবি আঁকার দক্ষতার পাশাপাশি জাপানি ট্র্যাডিশনাল কাহিনী বর্ণনার শিল্পে বিশেষ ঝোঁক ছিল তার। যেহেতু ম্যাজিক ল্যান্টার্নের ব্যবসাও ছিল তাঁর, তিনি জানতেন এর উপযোগিতা। তার মাথায় এল নতুন এক বুদ্ধি। কেমন হয়, যদি তার গল্প বলার দক্ষতাকে ম্যাজিক ল্যান্টার্নের প্রযুক্তির সাথে যোগসাজশ ঘটানো যায়??

এনিমে সৃষ্টির ইতিহাস - প্রথম পর্ব | Origin of Anime | Peak Fiction
উৎসুশি-এ

প্রতিভাবান ছিলেন কামেয়া তোরাকু। জাপানে কাবুকি, বুনরাকু, রাকুগো ইত্যাদি নৃত্যগীতের মাধ্যমে কাহিনীভিত্তিক পরিবেশন আগের থেকেই বিখ্যাত ছিল। এই ধরণের পরিবেশনাগুলোতে একজন কাহিনী বলিয়ে গীতির মাধ্যমে কাহিনী বর্ণনা তথা narrator হিসেবে কাজ করতেন, আর মঞ্চে শিল্পী বা পাপেটের সাহায্যে কাহিনী প্রদর্শিত হতো। ১৮০৩ সালে এডো শহরে তোরাকু তার প্রথম ম্যাজিক ল্যান্টার্ন প্রদর্শনী পরিবেশন করেন। কাবুকি বা বুনরাকুর মতো এতেও ছিল একজন বর্ণনাকারী আর সুরের তালে ফুটিয়ে তোলা গল্পকথা, কিন্তু মানুষ দ্বারা মঞ্চ পরিবেশনার বদলে কাঁচের স্লাইডে ফুটিয়ে তোলা ছবি প্রদর্শিত হলো আধাস্বচ্ছ জাপানি কাগজের স্ক্রিন এর উপর।

তুমুল জনপ্রিয় হলো এডো শহরের বোদ্ধা জনগোষ্ঠীর মধ্যে। এভাবে করেই কাবুকি, বুনরাকুর আদলে ম্যাজিক ল্যান্টার্নের সাহায্যে প্রদর্শিত চলমান আলোকচিত্র তথা উৎসুশি-এ বিখ্যাত হয়ে উঠতে লাগলো জাপানে। সামুরাইদের কাহিনী, সুখ দুঃখ, প্রেমভালোবাসার কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হতো পর্দায়, সুরসঙ্গীতের তালে তালে। এছাড়াও ভৌতিক কাহিনীও দর্শক টানতো প্রচুর। পরবর্তীতে এর সাথে সেকুয়োবশি যুক্ত হয়ে,(বাদ্যযন্ত্রের তালে গীতির মাধ্যমে কাহিনী পরিবেশন) মাধুর্য আরো বাড়িয়ে তোলে। পরিবহনের সুবিধার্থে তোরাকু সাহেব ম্যাজিক ল্যান্টার্নের ধাতব বডি কাঠ দিয়ে বানিয়ে নিলেন। জাপানি কারিগররা বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যেগুলো আধুনিক স্লাইডশো ট্রানজিশন এর সাথে সাযুজ্যপূর্ণ।

ম্যাজিক ট্রিকএর মতোই দর্শক এর পেছনের কারিকুরি বুঝতো না। তৎকালীন জাপানি জনগোষ্ঠীর কাছে এটা "খৃষ্টান মিশনারির যাদু" বলে বোধ হতো। সেইসময় একটা ট্রিক খুব জনপ্রিয় ছিল, আর সেটা হলো, "হানা-মোনো", এই হানামোনো ছিল কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটিয়ে তোলার "এনিমেশন" আরকি। এছাড়াও গাছে পাতা ভরে ওঠাটাও আরেকটি চমৎকার দর্শক টানার ট্রিক ছিল। পুরো ঊনবিংশ শতকের একটি জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম ছিল এই উৎসুশি-এ। মূলত যেটা ছিল, জাপানের ঐতিহ্যবাহী নাট্যকলার সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সৃজনশীল মিশ্রণ। আর তার হাত ধরেই জাপানি এনিমেশনের ঊষালগ্নের সূচনা। 

সময়ের সাথে সাথে উৎসুশি-এ হারিয়ে যায়। মানুষ অন্য মাধ্যমের বিনোদনের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে। ১৯২৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে অনেক ম্যাজিক ল্যান্টার্ন খোয়া যায়। কিন্তু ততোদিনে, এনিমে শিল্প ধীরে ধীরে পাখা মেলতে শুরু করেছে।

লিখা - জুনায়েদ মাশরাফি

- Peak Fiction