অ্যানিমে বা আনিমে বা এনিমে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল তা পড়ুন একদম প্রথম থেকে। এনিমে কি? কিভাবে এত জনপ্রিয় হয়?Origin and History of Anime - Peak Fiction

এনিমের ইতিহাস - তৃতীয় পর্ব 

১৯১৭ সালের পর জুনচি আর সেইতারোর হাত ধরে এনিমেশন শিল্প শুরু হলেও পথ চলাটা সহজ ছিল না মোটেই। ১৯২৩ সালের ভুমিকম্পে জাপানের অনেক মুল্যবান এনিমেশন মুভি হারিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় সেইতারোর স্টুডিও, সেই সাথে তার সব কাজ। সমস্যা শুধু এখানেই শেষ না। ততোদিনে ডিজনির মতো বড় কোম্পানিগুলো জাপানে বাজার পেতে শুরু করেছে। তাদের ছবিগুলো ছিল দামে সস্তা, সহজলভ্য। যেটার সাথে তাল রেখে মার্কেটে টিকে থাকতে জাপানি স্টুডিওগুলোকে নিতে হয়েছিল কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি। সীমিত কর্মী, সেলুলয়েড স্ট্রিপের বদলে কাটআউট ছবি ব্যবহার করে এনিমেশন। সহজেই তাঁরা প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ে যাচ্ছিলেন। কারণ তাদের প্রতিপক্ষ তখন বড় পশ্চিমা কোম্পানি ডিজনি। তাদের ছবির মান ও শব্দ- দুটোই চমৎকার।
অ্যানিমে সৃষ্টির ইতিহাস - পর্ব ৩ - Peak Fiction
সেইতারোর স্টুডিও সফল না হলেও, কিছু মণিরত্নের জন্ম হয়েছিল সেখানে। তাঁরা হলেন, ইয়াসুজি মুরাতা, হাকুজান কিমুরা, সানায়ে ইয়ামামোতো, নোবুরো ইয়োফুজি প্রমুখ। সেইতারোর সেসব ছাত্রদের প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমের বদলে এই সীমিত সম্পদেই অসাধারণ হয়ে উঠতে লাগলো জাপানি এনিমেশন। কাটআউট ছবি ব্যবহার করেই চমৎকার দেখাচ্ছিলেন ইয়াসুজি মুরাতা, নোবুরো ইওফুজি।
কেনজো মাসাওকা, অ্যানিমে সৃষ্টির ইতিহাস - পর্ব ৩ - Peak Fiction, অ্যানিমে বা আনিমে বা এনিমে
কেনজো মাসাওকা
আরেক ওস্তাদ ছিলেন কেনজো মাসাওকা। ছোট এনিমেশন স্টুডিওতে চাকরি করতেন প্রথমে। তিনি আবার সেইতারো আর তার শিষ্যদের মতো সীমিত সম্পদ সদ্ব্যবহার করে ক্ষান্ত থাকার বান্দা ছিলেন না। মিৎসুও সেওকে সাথে নিয়ে জাপানি এনিমেশনকে পাশ্চাত্যের কার্টুনের মানে উত্তরণ করার সর্বরকম প্রচেষ্টা করেন তিনি। তার কারণেই সেলুলয়েড স্ট্রিপভিত্তিক এনিমেশন জাপানি এনিমেশন ইন্ডাস্ট্রিতে পদার্পন করে। এনিমেশনের কাজে মাল্টিপল ক্যামেরা এর ব্যবহার করা শুরু করেন তিনি।

অ্যানিমে সৃষ্টির ইতিহাস - পর্ব ৩ - Peak Fiction
the world of power and women
১৯৩৩ সালে তিনি বের করেন, "চিকারা তো ওন্না নো ইয়ো নো নাকা" (the world of power and women). এটা ছিল প্রথম "টকি" এনিমে। অর্থাৎ এতে শব্দ ও ছবি দুটোই ছিল। বলে রাখা ভালো, ১৯৩১ সালে জাপানের প্রথম শব্দসহ motion movie "মাদামু তো নিয়োবো" (Neighbor's wife and mine) বের হবার একবছরের মাথায়ই এই এনিমে বের হয়। এক বছরের মাথায় সম্পূর্ণ সেলুলয়েড স্ট্রিপ ব্যবহার করে নির্মিত "Dance of chagamas" বের করেন তিনি। 
মাসাওকা সাহেবের কোম্পানির থেকে বেরিয়ে গিয়ে ১৯৩৫ নিজের কোম্পানি করেন মিৎসুও সেও। সেই কোম্পানি ১৯৪১ সালে বের করে "আরি চ্যান"। যেটা ছিল মাল্টিপ্লেন ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রথম এনিমে।
এইসব ডিভাইস ব্যবহার করা ছিল ব্যয়সাপেক্ষ, যা সম্পূর্ণরূপে ছোট কোম্পানির বাজেট দিয়ে কুলানো সম্ভবপর হতো না। এইজন্য এসব এনিমেশন কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন ফিল্ম, সরকারি প্রচারণা, সচেতনতামূলক মুভি, ইত্যাদি তৈরি করে স্পন্সরশিপ জোগাড় করা শুরু করে। এতে করে একদিকে যেমন স্টুডিওগুলোর অর্থসঞ্চার হচ্ছিল, অপরদিকে এনিমে হয়ে উঠছিল তথ্য ও যোগাযোগের কার্যকর মাধ্যম। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষামুলক এনিমে বাচ্চাদের দেখতে অনুমোদন দেয়। সামরিক প্রচারণার কাজেও এনিমেকে কাজে লাগানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তৈরি মোমোতারো নো উমিওয়াশি ছিল এমন এরকম "প্রোপাগান্ডা ফিল্ম" যেটা জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়াতে বানানো হয়েছিল।
লিখা - জুনায়েদ মাশরাফি
- Peak Fiction